ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে কল্যাণের সম্পর্ক রয়েছে
ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রভাব নিয়ে ইদানীং অনেক কথা হলেও সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারে মানুষের ‘ইতিবাচক কল্যাণ’ হয়। বিশ্বের ১৬৮টি দেশে সমীক্ষা পরিচালনা করে এই ফল পাওয়া গেছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারজনিত উদ্বেগ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের আইন হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অক্সফোর্ডের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, অনলাইনে থাকার কারণে মানুষের সার্বিক কল্যাণ হয়। সে জন্য এসব বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কেবল ব্যক্তিগত গল্পের ওপর ভর না করে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে করা উচিত বলে জরিপের প্রতিবেদনে মত দেওয়া হয়েছে।
গবেষকেরা ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৫ থেকে ৯৯ বছর বয়সী দুই মিলিয়ন বা ২০ লাখ মানুষের ওপর জরিপ করেছে—লাতিন আমেরিকা থেকে শুরু করে এশিয়া ও আফ্রিকা পর্যন্ত ছিল এই জরিপের বিস্তৃতি।
জরিপে দেখা গেছে, যে মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে এবং যাঁরা তা সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করেন, তাঁদের সন্তুষ্টির মাত্রা অন্যদের চেয়ে বেশি; সামাজিক কল্যাণের দিক থেকেও তাঁরা এগিয়ে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক কেভিন ম্যাকনওয়ে বলেন, এই গবেষণার পরিধি ছিল বেশ বড়; তা সত্ত্বেও এই গবেষণা সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
কেভিন ম্যাকনওয়ে আরও বলেন, ইন্টারনেট নিয়ে আলোচনার কেবল সূত্রপাত হলো; এর মধ্য দিয়ে মানুষের এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে যে ইন্টারনেট সবার জন্য ক্ষতিকর।
গবেষকেরা মানবকল্যাণের আটটি সূচক নিয়ে কাজ করেছেন, যেমন জীবনের সন্তুষ্টি, প্রতিদিনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, সমাজের কল্যাণ ইত্যাদি। গবেষকেরা প্রায় ৩৪ হাজার বিভিন্ন পরিসংখ্যান মডেলের মাল্টিভার্স ও তথ্যের বিভিন্ন উপসেট নিয়ে কাজ করেছেন।
প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে মানুষের সার্বিক কল্যাণের সম্পর্ক আছে; এই কল্যাণের ধরন ইতিবাচক ও পরিসংখ্যানের দিক থেকেও তা তাৎপর্যপূর্ণ। মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে সমাজের মঙ্গলের সম্পর্ক নেতিবাচক—এটা মূলত ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা প্রমাণিত নয় যে তাঁদের অসুখের কারণ ইন্টারনেট সংযোগ, যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সঙ্গে নারীদের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া ও বিষাদগ্রস্ততার সম্পর্ক নিয়ে আগে যেসব প্রতিবেদন বেরিয়েছে, তার বাস্তবতা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রতিবেদনেও পাওয়া গেছে।
গবেষকেরা অবশ্য এই গবেষণার সীমাবদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন; বিশেষ করে তাঁরা যে কার্যকারণ সম্পর্ক বের করতে পারেননি, সেটি।
এই গবেষণাপত্রের পর্যালোচনা হয়নি; এ ছাড়া এই গবেষণার বেশির ভাগ ইংরেজিভাষী সচ্ছল দেশগুলোতে করা হয়েছে। গবেষণার এই প্রেক্ষাপট বদলে গেলে ফলাফলও ভিন্ন হতে পারত।
গবেষকেরা বলেন, শিশুদের জন্য সেরা পরিবেশ নিশ্চিত করতে তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কেবল মানুষের ব্যক্তিগত গল্পের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলে চলবে না। মানুষের ব্যক্তিগত গল্পের ভিত্তিতে নীতি প্রণয়ন করা হলে অনেক মানুষকে আশাহত করা হবে, এই হচ্ছে তাঁদের মত।
গবেষকদের এই কথা একাধিকবার বলার কারণ হলো, আগের গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতির সম্পর্ক নেই।