টপ নিউজস্বাস্থ্য

ডায়াবেটিস রোগী কত দিন পরপর সুগার মাপলে ভালো

ডায়াবেটিস রোগী কত দিন পরপর সুগার মাপলে ভালো, তা জানতে লেখাটি পড়তে পারেন। কেননা, এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। এবং জটিলতা দূর করার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা প্রয়োজন

তাই, ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজ মাপা অত্যন্ত অপরিহার্য। কাজটি মোটেও জটিল নয়। ঘরে বসে মাত্র এক ফোঁটা রক্তের সাহায্যে গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তের সুগার মাপা যায়। এর মাধ্যমে জানা যায়, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার আকস্মিক/ঘন ঘন পরিবর্তন। আরও জানা যায়, গ্লুকোজের মাত্রা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাচ্ছে কি না। এ ছাড়া চিকিৎসার ধরন নির্ণয় করা সম্ভব। সুগার মাপলে ভালো থাকবেন।

—এবার আসুন রক্তের গ্লুকোজ কখন মাপলে ভালো—
এর আগে জানতে হবে, কতবার রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হবে। এই বিষয়টি নির্ভর করে—

  • ডায়াবেটিসের ধরন
  • কোন ধরনের চিকিৎসা পাচ্ছেন (ইনসুলিন/মুখে খাওয়ার ওষুধ)
  • অন্য কোনো রোগ রয়েছে কি না
  • গর্ভধারণ

—টাইপ–১ ডায়াবেটিসের বেলায়—
টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসকরা তাঁদের দিনে চার থেকে ছয়বার, এমনকি অনেক সময় দশবার পর্যন্ত ব্লাড সুগার চেক করার পরামর্শ দেন।

—যখন করবেন—

  • নাশতা ও খাওয়ার আগে
  • ব্যায়ামের আগে ও পরে
  • ঘুমানোর আগে
  • কখনো কখনো শেষরাতে
  • রক্তে শর্করা অতিরিক্ত বেশি কিংবা অতিরিক্ত কম হয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া/হাইপারগ্লাইসেমিয়া উপসর্গগুলো অনুভব করলে
  • ইনসুলিনের ডোজ সামঞ্জস্যের সময়

—টাইপ–২ ডায়াবেটিস থাকলে—
যাঁরা ইনসুলিন নিচ্ছেন—

  • সপ্তাহে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ দিন
  • কোনো দিন সকালের নাশতার আগে ও পরে
  • এক দিন দুপুরের খাবারের আগে ও পরে
  • অন্য দিন (কোনো কোনো দিন) রাতের খাবারের আগে ও পরে
  • রাতে ঘুমানোর আগে
  • ইনসুলিনের ডোজ সামঞ্জস্যের সময়

—যাঁরা ওষুধ খাচ্ছেন—

  • দৈনিক বা সপ্তাহে কয়েকবার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী
  • সাধারণত সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার
  • (অন্য দিন) কোনো দিন সকালে খাওয়ার আগে এবং নাশতার দুই ঘণ্টা পরে
  • কোনো দিন রাতের খাওয়ার আগে
  • ব্যায়াম করার আগে (বিশেষ করে সালফোনাইল গ্রুপের ওষুধ সেবন করলে)

—গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে—

  • সপ্তাহে অন্তত এক দিন
  • সকালের নাশতার আগে-পরে
  • দুপুর ও রাতে খাওয়ার পর গ্লুকোজ মাপতে হবে

—ঘন ঘন রক্ত পরীক্ষা প্রয়োজন—

  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ইনসুলিন বা ওষুধের কমবেশি করার সময় দিনে নিয়মিত ৪ থেকে ৬ বার রক্ত পরীক্ষা
  • জ্বর, ডায়রিয়া; এ ধরনের কোনো অসুস্থতায় ভুগলে
  • স্বাভাবিক রুটিনে পরিবর্তন ঘটলে
  • ডায়াবেটিসের নতুন কোনো ওষুধ শুরু করলে
  • রক্তে গ্লুকোজ–স্বল্পতার (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) কোনো উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করতে হবে

—কখন করবেন—

  • নাশতার আগে এবং দুই ঘণ্টা পরে
  • দুপুরে খাওয়ার আগে এবং দুই ঘণ্টা পরে
  • রাতের খাবারের আগে এবং দুই ঘণ্টা পর

—গ্লুকোজের মাত্রা কত থাকা প্রয়োজন
আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ অনুযায়ী কেমন দেখুন। তারা বলছে, খাওয়ার আগে প্রতি লিটারে ৪.২ থেকে ৭.২ মিলিমোল গ্লুকোজের মাত্রা রাখা উচিত। তাদের মতে, খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ১০ মিলিমোলের নিচে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা রাখলে ভালো।

সহজভাবে জেনে রাখুন—ব্লাড সুগার টার্গেট হবে ৬, ৭, ৮। অর্থাৎ খালি পেটে ৬, ৩ মাসের গড় HbA1c ৭ এবং খাওয়ার পরে ৮।

তবে, বয়স, ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা, কিডনির জটিলতা, অন্যান্য অসুখ, গর্ভাবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজের লক্ষ্যমাত্রা ভিন্ন হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে।

—ব্লাড সুগার ডায়েরি—

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য রোগীদের নিয়মিত একটি ব্লাড সুগার ডায়েরি রাখার কথা বলেন ডাক্তাররা
  • এই ডায়েরির গুরুত্ব অপরিসীম
  • ডায়েরিতে ব্লাড সুগার মেপে নিয়মিত সময় ও তারিখ লিখে রাখবেন
  • ইনসুলিন নিচ্ছেন যাঁরা, ব্লাড সুগারের সঙ্গে ইনসুলিন কত ডোজ করে নিচ্ছেন, লিখে রাখুন
  • ব্লাড সুগার বেড়ে বা কমে উপসর্গ দেখা দিলে তা মেপে ফেলুন এবং তাৎক্ষণিক লিখে রাখবেন
  • নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসকের কাছে এই ব্লাড সুগার ডায়েরি নিয়ে যান। সেখানে প্রদর্শিত রক্তের লেভেল অনুযায়ী তিনি আপনার ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *