টপ নিউজস্বাস্থ্য

থাইরয়েডজনিত রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

থাইরয়েড হলো একটা গ্রন্থি। দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতো। এটা থাকে আমাদের ঠিক কণ্ঠনালির সামনে। এখান থেকে যে রসটা নিঃসৃত হয়, তা থাইরয়েড হরমোন হিসেবে পরিচিত। এ থাইরয়েড হরমোন সবার দেহে রয়েছে। আমাদের স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্য এ হরমোন বিশেষভাবে অপরিহার্য।

হরমোনটি যখন রক্তের মধ্যে যায় তখন বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে। এটি বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। শিশুদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাদের বেড়ে ওঠা, বয়ঃসন্ধির লক্ষণ প্রভৃতি এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়া নারীদের গর্ভধারণ, ঋতুচক্র প্রভৃতিও নিয়ন্ত্রণ করে।

থাইরয়েড হরমোন একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকে। কিন্তু কোনো কারণে যদি এ হরমোনের পরিমাণ কমে যায়, তবে তা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আবার কোনো কারণে যদি এ হরমোন আমাদের শরীরে বেড়ে যায়, সেটাও আমাদের জন্য ক্ষতিকর।

আমাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোন বেড়ে যাওয়াকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলা হয়। আর উল্টোটি ঘটলে অর্থাৎ রক্তে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে একে বলে হাইপোথাইরয়েডিজম। উল্লেখিত দুই ধরনের সমস্যার মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজম বর্তমানে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে।

কী কারণে হাইপোথাইরয়েডিজম হয়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগটি জেনেটিক বা বংশগত। বংশের ইতিহাস খুঁজে দেখলে দেখা যাবে মা-বাবা, ভাইবোন কেউ না কেউ এতে আক্রান্ত ছিলেন। এর বাইরে যদি খাদ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে প্রথমে আসবে আয়োডিন। আয়োডিনের স্বল্পতার কারণে এ রোগটি হয়। একসময় আয়োডিনের স্বল্পতাকে প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হতো। বর্তমানে আমরা কমবেশি সবাই আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে অভ্যস্ত। তাই বর্তমানে জেনেটিক কারণকেই দায়ী করা হয়। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে গলার কোনো অপারেশন। থাইরয়েডের সার্জারি করার জন্য অথবা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগটিতে কেউ আক্রান্ত হতে পারে।

লক্ষণ
—কোনো কারণ ছাড়া ওজন বেড়ে যায়
—খাওয়াদাওয়া ও চলাফেরা ঠিক থাকা সত্ত্বেও ওজন বেড়ে যায়
—সব সময় ঘুম ঘুম ভাব থাকে
—কাজকর্মে অনীহা হয়, শুয়ে-বসে থাকতে ইচ্ছা করে
—অনেক সময় দেখা যায় যে, আগে কাজকর্মের যে গতি ছিল তা নেই। ধীরগতির হচ্ছে
—আবার অনেকের হাত, পা ও মুখ ফুলে যায়
—শরীরে পানি চলে আসে
—হঠাৎ শীত অনুভূত হয়
—কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হতে পারে
—নারীদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ঋতুচক্র হতে পারে

সঠিক সময়ে এ রোগের চিকিৎসা করালে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। চিকিৎসাবিদরা সাধারণত দুটি রক্ত পরীক্ষা করে রোগটি নির্ণয় করে থাকেন—FT4 ও TSH। মূলত রক্ত পরীক্ষা করে রোগটি নির্ণয় করা সম্ভব। রক্ত পরীক্ষার পর রিপোর্ট পজিটিভ এলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তার রোগীকে প্রেসক্রিপশান করেন যাতে দ্রুত নিরাময় হয়। রোগীভেদে থাইরক্স বা থাইরোন বা থাইরিন নামের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে থাকেন তারা।

রোগীকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, এটা সারা জীবনের রোগ। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন করলে কোনো সমস্যা হয় না। তাই ডাক্টারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। রক্তে হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসা পর্যন্ত দুই মাস পরপর রোগীকে চেকআপের জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। নিয়ন্ত্রণে আসার পর বছরে একবার বা দুবার ডাক্তারের কাছে চেকআপের জন্য যেতে হবে। গর্ভকালীন অবস্থায় ও শিশুদের ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজম তুলনামূলকভাবে বেশি বিপজ্জনক। তাই লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *