ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক সুগন্ধি জাদুঘর
ফ্রান্সের দক্ষিণে গ্রাস শহর। ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে, আলপসের কোলে ছবির মতো সুন্দর এই শহর ফ্রান্সের পারফিউমের উৎসকেন্দ্র। এই শহরকে বলা হয় ‘পারফিউমের রাজধানী’। এখানে রয়েছে পৃথিবীর একমাত্র সুগন্ধির জাদুঘর—যার নাম আন্তর্জাতিক সুগন্ধি জাদুঘর।
দক্ষিণ ফ্রান্সে বহু শতাব্দী ধরে নানা সুগন্ধি ফুলের চাষ হয়। কমলা, জুঁই, বেলি, ল্যাভেন্ডার, রজনীগন্ধা, নার্সিসাস, জেরানিয়াম, আইরিস কিংবা গোলাপের দিগন্তবিস্তীর্ণ মাঠ রয়েছে এখানে। এ যেন ফুলের রাজ্য, এক রূপকথার দেশ।
ফ্রান্সের বিখ্যাত পারফিউম তৈরির কারখানাগুলো এ অঞ্চলেই। ফুল ও সুগন্ধি ঘিরে অনেক মানুষের বহু বছরের সাধনা, মেধা, পরিশ্রম, নিষ্ঠার কারণেই ইউনেসকো এ শহরকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছে।
বাগানের মধ্যে উজ্জ্বল কমলা রঙের চারতলা দালান। ১৯৮৯ সাল থেকে এই বিশাল দালানেই সুগন্ধির জাদুঘর।
সময়কে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে এখানে। সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু করে প্রাচীনকাল, মধ্যযুগ হয়ে, আধুনিক এবং আজকের দিন পর্যন্ত দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীদের জন্য প্রায় ৩৮ হাজার বর্গফুটজুড়ে থরে থরে সাজানো আছে সুগন্ধির কাব্যময় ইতিহাস, বিস্ময়কর ঐতিহ্য ও বিবর্তন।
সেই সঙ্গে বিজ্ঞান ও সৃজনশীলতার গৌরবগাথা, যেন এক মোহময় পারফিউমের জগৎ। এই জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে আমাদের উপমহাদেশের হাতির দাঁতের সুগন্ধির কৌটা, গোলাপদানি, কাজলদানিসহ ৫০ হাজার বস্তুর এক বিশাল ভান্ডার।
প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৬ ইউরো। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে। টিকিটের সঙ্গে ছোট্ট একটি নির্দেশিকা দেওয়া হয়। ভালোভাবে দেখতে ও জানতে এবং বিভিন্ন জায়গায় রাখা নানা ধরনের বস্তু শুঁকে ঘ্রাণেন্দ্রিয় শাণিত করতে চাইলে হাতে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা সময় রাখতে হবে।
একই টিকিটে বেশ কয়েকটি ফুল চাষের মাঠও পরিদর্শন করা যায়। বিশেষ কিছু ছুটির দিন ছাড়া সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এবং জুলাই-আগস্ট মাসে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে আন্তর্জাতিক সুগন্ধি জাদুঘর।
নিচতলা থেকে শুরু করে, এক এক করে চারতলায় পৌঁছে, অন্য পথে নিচে নেমে আসতে হবে এবং একদম শেষে একটি চমৎকার সাজানো-গোছানো বুটিক পেরিয়ে অন্য ফটক দিয়ে বের হতে হবে।