সেক্সটরশন: অনলাইনে নগ্ন ছবি সংগ্রহ করা শেখাচ্ছে অপরাধীরা
অনলাইনে কৌশলে কারও কাছ থেকে নগ্ন ছবি ও ভিডিও সংগ্রহের পর তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে থাকে বিভিন্ন অপরাধী চক্র। এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায় করে তারা, যা ‘সেক্সটরশন’ নামে পরিচিত।
বিবিসির সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ ধরনের অপরাধীরা এখন প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু নির্দেশিকা বিক্রি করছে। এতে অনলাইনে নগ্ন ছবি সংগ্রহ ও জিম্মি করে অর্থ বা স্বার্থ আদায়ের (ব্ল্যাকমেল) কৌশল শেখানো হচ্ছে।
কীভাবে অনলাইনে নিজেকে একজন তরুণী হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে, কীভাবে ভুলিয়ে-ভালিয়ে কারও কাছ থেকে নগ্ন ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ এবং তাদের ব্ল্যাকমেল করতে হবে, তার কৌশলগুলো এসব নির্দেশিকায় শেখানো হচ্ছে। অনলাইনে ভিডিও পোস্ট করে এসব নির্দেশিকা বিক্রির চেষ্টা চলছে।
মঙ্গলবার ওলামিডে শানু নামের এক ব্যক্তিকে লন্ডনের একটি আদালতে হাজির করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের ব্ল্যাকমেল করে ২০ লাখ পাউন্ড হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের সঙ্গে শানুর সংশ্লিষ্টতা আছে।
গত মাসে যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে। অনলাইনে নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখানো চক্রগুলোকে নিয়ে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিম আফ্রিকাভিত্তিক (মূলত নাইজেরিয়া) বিভিন্ন অপরাধী চক্রের হাতে অনলাইনে শিশুদের ব্ল্যাকমেলের শিকার হওয়ার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।
অনলাইনে সেক্সটরশনের শিকার হয়ে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে যুক্তরাজ্যে দুই ব্রিটিশ কিশোর আত্মহত্যা করেছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও অনলাইনে যৌন হয়রানিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ পল র্যাফিল এ ধরনের ঘটনাকে শিশুদের জন্য বড় হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন।
র্যাফিল বলেন, ‘ইন্টারনেট-দুনিয়ার প্রতারকেরা গত দুই বছরে বুঝতে পেরেছে, তারা ইন্টারনেটে এমন একটি নতুন বাজার খুঁজে পেয়েছে, যেখানে তারা প্রতারণা করে খুব দ্রুত ধনী হতে পারবে। আর তাদের সে লক্ষ্যবস্তু হলো কিশোরেরা।’
র্যাফিল আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে প্রাপ্তবয়স্কদের সেক্সটরশনের লক্ষ্যবস্তু করা হলেও এখন কিশোর বয়সীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে।
অনলাইনে প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেলের অভিযোগে যুক্তরাজ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ওলামিডে শানুর প্রত্যর্পণ চেয়ে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। প্রতারণা, অর্থ পাচার ও অনলাইনে হয়রানির অভিযোগে ৩৩ বছর বয়সী শানুর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহো অঙ্গরাজ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
চারজন ভুক্তভোগীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শানুর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের একজন শিশু। তবে তদন্তকারীদের ধারণা, তিন বছর ধরে এমন শত শত ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং অনলাইনে যৌন হয়রানিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ পল র্যাফিল মনে করেন, সেক্সটরশন বন্ধে বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না।
র্যাফিল বলেন, ‘দুই বছর ধরে ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটে এ ধরনের অপরাধের হার বেশ বেড়েছে। এসব প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ধরনের অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
স্ন্যাপচ্যাট কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে বলেছে, ‘এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা জোরদার করছি। বিশেষ করে যৌনতাবিষয়ক জিনিসপত্র প্রকাশ করার হুমকিসংক্রান্ত ঘটনায় অভিযোগ (রিপোর্ট) করার সুযোগ থাকবে এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য অ্যাপের মাধ্যমে সচেতনতামূলক শিক্ষা কার্যক্রম থাকবে।’
ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা এমন একটি রিপোর্টিং ব্যবস্থা চালু করেছে, যেন কেউ ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ করার হুমকি দিলে ভুক্তভোগী অভিযোগ জানাতে পারে।
টিকটক কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের প্ল্যাটফর্মটির নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন কেউ কিশোরদের ক্ষতি করতে না পারে।